
#এইচএসসি, দিনলিপি
এইচএসসি পরীক্ষা: গুরুত্বপূর্ণ দিনলিপি
প্রশ্ন ১: তোমার কলেজ জীবনে কোনো স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছে, তার উল্লেখপূর্বক একটি দিনলিপি লেখ।
অথবা, এইচএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় তুমি প্রথম হয়েছো, সে দিনের দিনলিপি লেখ।
উত্তর: নিচে আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা উল্লেখপূর্বক একদিনের দিনলিপি উপস্থাপন করা হলো:
১০ ডিসেম্বর ২০২৩ রবিবার: সময়: রাত ১১.৩০ মি.
প্রতিদিনের মতো আজও ভোর ৫.০০টায় ঘুম থেকে উঠি। নামাজ পড়ে হালকা ব্যায়াম করে পড়তে বসি। আজ দুপুর ১২.০০টায় এইচএসসি নির্বাচনী পরীক্ষার রেজাল্ট দেবে। ১১টার দিকে কলেজে গিয়ে জানতে পারলাম হল রুমে আনুষ্ঠানিকভাবে অধ্যক্ষ স্যার রেজাল্ট ঘোষণা করবেন। এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ এর পরীক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত বিশেষ ক্লাশ শেষ করে হল রুমে ঢুকি। ওখানে ছাত্র-ছাত্রী গিজগিজ করছে। তিল ধারণের ঠাঁই নেই। মৃত্তিকা, রিপা, দিশা বর্মণ, উম্মে হাবিবা, জাকিয়া, পূজা, মাধুর্য, অভ্র, সোহাইল, জেনিথ, আসাদ, জেরিন, নিশি, পুষণ, মেধা, মৌ, নিশাত, রিফাত ফয়সাল, নাবা, ফেরদৌস, আরিক, লাবিব, সিয়াম, রাতিন, মোনেম, তাকিন তন্ময়সহ অনেকেই উপস্থিত। ওরা আমাকে দেখে ডেকে নেয়। চাপাচাপি করে ওদের কাছে বসতে দেয়। ওরা আমাকে জিনিয়াস বলে সম্বোধন করে। এ ধরণের সম্বোধনের মানে কী জানতে চাইলে ওরা বলে তুই নির্বাচনী পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিস আমাদের মিষ্টি খাওয়াতে হবে। আমি ওদের কথা বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করি না। আমার পরীক্ষা ভালো হয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু প্রথম হবো এটা বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে না। কারণ, আমাদের কলেজ এই এলাকার সেরা কলেজ। এখানে এই অঞ্চলের সেরা ছাত্র-ছাত্রীরাই পড়ে। দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রায় বার শত ছাত্র-ছাত্রী আছে। এদের মধ্যে আমি প্রথম হবো, এরা বলে কী! যাক ত্রিশ মিনিটের মধ্যে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। রেজাল্টের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। অধ্যক্ষ স্যার হল রুমে ঢুকেন সাথে আরো সিনিয়র স্যাররা। স্যাররা উপদেশমূলক বক্তব্য দেন। পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক স্যার রেজাল্টের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। অতঃপর অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন স্যার সম্মিলিত মেধাতালিকায় স্থান নেয়া ছাত্র-ছাত্রীদের নাম ঘোষণা করেন। সে ঘোষণায় আমার নাম ভেসে আসে এবং আমিই প্রথম হয়েছি। প্রথমে বিশ্বাস হতে চাইল না। ভাবলাম আমার নামে হয়তো অন্য কেউ আছে। কিন্তু স্যার পর পর দুবার রোল নম্বরসহ আমার নাম ঘোষণা করেন। অবিশ্বাস করি কী করে? অধ্যক্ষ স্যার এও ঘোষণা করেন যে, যারা মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে। যথারীতি আমাকে ডাকা হয়। আমি মঞ্চে উঠি। অধ্যক্ষ স্যারের হাত থেকে শত শত সহপাঠী আর শিক্ষকদের সামনে পুরস্কার গ্রহণ করি। অনেকেই ছবি তুলেন। আমার অসাধারণ আনন্দ হয়। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
এক বুক আনন্দ নিয়ে বাসায় ফিরি। মা এই সংবাদ শোনার পর মহা খুশি। মায়ের চোখে আনন্দ ও খুশির যে ঝিলিক দেখলাম তা কোনো দিন ভোলার নয়। বাবাকে মা ইতোমধ্যেই ফোন করে দিয়েছিলেন। বাবা আধ ঘণ্টার মধ্যে বাসায় উপস্থিত। হাতে মিষ্টির প্যাকেট। বাবার চোখেও মায়ের মতো খুশির ঝিলিক। আমার ছোট বোনও বাসায় এসে উপস্থিত। ও তো বিশ্বাসই করতে চায় না। আমার এই সাফল্যকে অভিনন্দিত করার জন্য আমার ছোটবোন মার কাছে অনেক কিছু খাওয়ার আবদার করল। ওর সেই আবদার পুরনের জন্য বাবা বাজারে গেলেন। রাতের বেলা অনেক খাওয়া-দাওয়া হলো। রাতের বেলা খাওয়ার টেবিলে বাবা বললেন, ‘বাবা, সাফল্য কোনো গন্তব্য নয়, বরং এক গন্তব্য থেকে আরেক গন্তব্যে পৌঁছার বিরামহীন প্রয়াস। তিনি আরো বললেন, যে কোনো সাফল্যই মানুষকে দায়িত্ববান করে। আশা করি তুমি আরো দায়িত্বশীল হবে। তা হলেই এই সাফল্যের ধারা অব্যহত থাকবে।’ বাবার এই কথা আমি চিরদিন মনে রাখবো, আর মনে থাকবে আজকের এই স্মরণীয় দিনটির কথা।
ঘড়ির কাঁটা মধ্য রাতের সীমানাকে ছুঁই ছুঁই করছে। চোখেও যেন ঘুমের পাহাড় ভর করেছে। এখনই নিজেকে বিছানায় সমর্পণ করবো।
প্রশ্ন ২: তুমি কলেজ থেকে শিক্ষা সফরে গিয়েছ, তার বর্ণনা দিয়ে একটি দিনলিপি লেখ।
উত্তর: নিচে কলেজ থেকে শিক্ষা সফরে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখপূর্বক একদিনের দিনলিপি উপস্থাপন করা হলো:
১লা ডিসেম্বর ২০২৩, শুক্রবার; সময়: রাত ১১.৩০ মি.
একটি অসাধারণ আনন্দময় এবং শিক্ষণীয় দিনে সমাপ্তি হয় আজ। মনে একটি আনন্দ ও কৌতূহলের আমেজ নিয়ে ঘুম ভাঙে ভোর ৫টায়। ঘুম ভাঙতেই মনে হয় আজ আমরা কলেজে থেকে শিক্ষা সফরে যাবো প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার দিনাজপুরের কয়লা খনি। কলেজ পর্বে বন্ধুদের সাথে এটাই আমাদের প্রথম কোনো অনুষ্ঠান। আমাদের শিক্ষা সফরে সঙ্গী হয়- প্রকৃতি, সায়েম, নূর ইসলাম, পারভেজ, ফারহান, নিশাদ, নিহার রায়, রাখা, আয়শা সিদ্দিকা, সূচি, মৃত্তিকা, হৃদি, আরিফ হাসান, রিশা, সুরভি, মুমু, শায়লা, জেনিথ, আবদুল কাদের, মিম, নিশাত, সাইফ, ইফতি, জেমি, বুশরাসহ আরও অনেকে। আমাদের প্রিয় দুজন শিক্ষক- মুশফিক স্যার ও জাহাঙ্গীর স্যারে নেতৃত্বে কয়লা খনিতে যখন পৌঁছি তখন সকাল ১১টা বাজে। কয়লা খনির রেস্ট হাউসে ফ্রেস হয়ে আমরা কয়লা খনির ভেতরে প্রবেশ করি দুপুর ১২টার দিকে। তার আগে খনির কর্মকর্তা এবং প্রকৌশলীরা আমাদের কয়লা ও কয়লা খনির আদ্যান্ত বুঝিয়ে দিলেন। কিভাবে কয়লা খনির সৃষ্টি হয়, কিভাবে কয়লা উত্তোলন করা হয়, কিভাবে তা কাজে লাগানো হয়, কয়লা কিভাবে আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করছে ইত্যাদি। সব দেখে-শোনে বিস্মিত না হয় উপায় ছিল না। এরপর যখন কয়লা খনির ভিতরে প্রবেশ করি তখন মানবিক প্রযুক্তির উৎকর্ষ দেখে বিস্ময়ের সীমা অতিক্রম করে। এইখানে যদি আজ না আসতাম জীবনের একটি বিশেষ অধ্যায়ই অপূর্ণ থেকে যেত। কয়লা খনি থেকে আমরা যখন বের হই তখন দুপুর ১.৩০ মি.। দুপুর ২.০০টায় আমরা মধ্যাহ্নের আহার সেরে দিনাজপুরের বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম সৌন্দর্যের স্থান দেখতে বের হই। কান্তজীর মন্দিরের সৌন্দর্য দেখে আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। হয়তো এরকম কোনো মন্দিরের সৌন্দর্য দেখেই জীবনানন্দ দাশ উচ্চারণ করেছিলেন:
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য;
আমি এই মন্দির দেখে হতবাক হই এই ভেবে যে, আমাদের পূর্বপুরুষগণ চিন্তা-চেতনা, সৌন্দর্যবোধে এবং প্রযুক্তিতে কত উন্নত ছিলেন। আমরা কত মহান একটি জাতির উত্তরাধিকারী।
এরপর আমরা একে একে উপভোগ করি উত্তরবঙ্গের সুন্দর বন খ্যাত সিংড়া ফরেস্ট আর রামসাগরসহ ছোট-বড় অনেক প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম সৌন্দর্যের স্থান। সন্ধ্যার সাথে সাথেই আমরা কলেজের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি।
শিক্ষা সফরের আয়োজনের কিছু দায়িত্ব ছিল আমার উপর। এই দায়িত্ব শেষ করে যখন বাসায় ফিরি তখন রাত ১১টা। এত আনন্দের মধ্যেও শরীর তার ক্লান্ত হবার সিগনাল দিতে ভুল করে নি। রাতের আহার একটু আগেই শেষ করেছি। ক্লান্ত দেহ প্রশান্ত নিদ্রার বুকে আশ্রয় নেয়ার জন্য ব্যস্ত।
প্রশ্ন ৩: তোমার কলেজে মহান বিজয় দিবস উদযাপনের একটি দিনলিপি প্রস্তুত কর। (সকলবোর্ড-১৮)
উত্তর: নিচে আমাদের কলেজে বিজয় দিবস উদযাপনের একটি দিনলিপি উপস্থাপন করা হলো:
১৬ই ডিসেম্বর, শনিবার, ২০২৩ : সময়: রাত ১১.৩০ মি.
আজ ভোর সাড়ে চারটায় ঘুম থেকে উঠি। প্রাতঃকৃত্যু করে নামাজ/প্রার্থনা সম্পন্ন করি। নামাজ/প্রার্থনার পরই মনে একটি আনন্দের শিহরণ বয়ে যায়। কারণ, আজ মহান বিজয় দিবস। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য নেতৃত্বে, মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম বীরত্বে এবং ৩০ লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়। এই উপলক্ষে আমাদের কলেজ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। কলেজের বিভিন্ন কর্মসূচি শেষে আমাদের কলেজের বাংলা বিভাগ বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনের আয়োজন করে। এই আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন বাংলা বিভাগের শামীমা ম্যাডাম এবং মুশফিক স্যার। আবরার জাহিন, আলভি ইসলাম, শতাব্দী রায়, রিপন, লিশা, সামিয়া, শ্রদ্ধা, জায়েদ, নূর, ফাহিম, সোহান, কামরুজ্জামান, নুশরাত, ফারহান, তামান্না, ইবনাত, nvdmv wgg, শানু, পূজা রায়, রুবায়েদ ইসলাম, সাদিয়া, ইশরাত জাহান, রীমা, রেজওয়ান, ইশরাত মিম প্রমুখ। সবাই মিলে আমরা স্মৃতিসৌধে পৌঁছাই বিকাল ৩টার সময়। স্মৃতিসৌধ চত্বরে স্যার ও ম্যাডাম আমাদের গোল হয়ে দাঁড়াতে বললেন। ম্যাডাম জাতীয় স্মৃতিসৌধের তাৎপর্য সম্পর্কে বললেন- একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হয়েছে ৩০ লক্ষ শহিদের অমূল্য প্রাণের বিনিময়ে। এই মহান শহিদদের আত্মদানের স্মৃতিকে অম্লান ও অবিস্মরণীয় করে রাখার জন্য ঢাকার অদূরে সাভারে নির্মিত হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
একাত্তরে বর্বর পাক বাহিনীর কামান ও বুলেটের আঘাতে অকালে প্রাণ দিতে হয়েছিল সব বয়সের অগণিত বাঙালিকে। সেই বর্বর বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামে জীবন বাজি রেখে লড়েছে এদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। বীরবিক্রমে পরাজিত করেছে পাকিস্তানি জল্লাদবাহিনীকে। অগণিত তরুণ মুক্তিযোদ্ধার জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছে এই বিজয় আনতে গিয়ে। এই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে লেখা গৌরবময় ইতিহাসের স্মারক এই স্মৃতিসৌধ।
ম্যাডামের বক্তব্য শেষ হলে আমরা জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল ফটকে উপস্থিত হই। জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করতেই মনটা দেশপ্রেমে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। মনের পর্দায় ভাসতে থাকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের জনক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের স্মৃতি।
স্মৃতিসৌধ গড়ে উঠেছে ৮৪ একর জমির ওপর । সীমানা প্রাচীরের ভিতরে রয়েছে লাল ইটের প্রশস্ত পাকা রাস্তা, রাস্তার দুপাশে নানা জাতের ফুলের গাছ, কৃত্রিম জলাশয়, উন্মুক্ত মঞ্চ, আলাদা করে ফুলের বাগান, অভ্যর্থনা কেন্দ্র, হেলিপ্যাড, মসজিদ, রেস্তোঁরা। তাছাড়া এখানে রয়েছে আলাদা একটি বাগান- যেখানে রয়েছে ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের সমাহার। এখানে রয়েছে একটি কৃত্রিম জলাশয়, যাতে ফুটে রয়েছে অসংখ্য লাল শাপলা। মূল স্মৃতিসৌধে রয়েছে ৭টি কংক্রিটের ত্রিভূজাকৃতির স্তম্ভ। সর্বোচ্চ স্তম্ভটির উচ্চতা ১৫০ ফুট।
মুশফিক স্যার এই ৭টি স্তম্ভের তাৎপর্য সম্পর্কে বললেন: স্মৃতিসৌধের ৭টি স্তম্ভ হলো আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের ৭টি ধাপ। এর মধ্যে প্রথমটি উচ্চতায় সবচেয়ে ছোট। তবে প্রস্থে এটি সবচেয়ে বড়। এর এই আকৃতি নির্দেশ করে আন্দোলনের সূচনা অর্থাৎ ১৯৫২ সালকে। পরবর্তী স্তম্ভগুলো যথাক্রমে নির্দেশ করে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন ও বিজয়, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন ও তা প্রতিরোধের আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং সর্বশেষে ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ ও মহান বিজয়কে। স্যার আরো বললেন, এই স্মৃতিসৌধের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো: একেক দিক থেকে দেখলে একে একেক রকম মনে হয়। স্যারের বক্তব্য শেষ হলে আমি এর সৌন্দর্য ও তাৎপর্য উপলব্ধি করে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। আমার অন্তর থেকে কে যেন গেয়ে উঠল :
ও মা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমি ধরি
এদেশেতে জন্ম, যেন এদেশেতেই মরি।
স্মৃতি সৌধ থেকে বের হওয়ার পূর্বে মুশফিক স্যারের নেতৃত্বে একটি দেশাত্মবোধক গান গাইল: নিশা, জিম, হাসনাত, জাহিন সাইয়ারা, সিন্থিয়া, ফারদিনা, রেবেকা সুলতানা রীতিপ্রমুখ।
আজকের দিনের এই আয়োজন আমার স্মৃতিপটে চির অম্লান হয়ে থাকবে। শরীরে রাজ্যের ক্লান্তি এবং চোখে প্রশান্তির ঘুম তাড়া দিচ্ছে বিছানায় আত্মসমর্পণ করার জন্য। আমি এখনি নিজেকে বিছানায় সঁপে দিব।
প্রশ্ন ৪: তোমার এস এস সি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিনের অনুভূতি ব্যক্ত করে একটি দিনলিপি লেখ।
অথবা, কোনো এক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিনের দিনলিপি লেখ।
২৮শে নভেম্বর, সোমবার, ২০২২: সময়: রাত ১১.৩০ মি.
প্রতিদিনের মতো আজও ভোর ৫.০০টায় ঘুম থেকে উঠি। নামাজ পড়ে হালকা ব্যায়াম করে পড়তে বসি। আজ দুপুর ১২.০০টায় এস এস সি পরীক্ষা ২০২২-এর রেজাল্ট দেবে। গতকাল থেকে ভয় আর আনন্দের একটা মিশ্র অনুভূতি আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আমি আত্মবিশ্বাসী আমার ফলাফল আশানুরূপ হবে। তারপরও একটা অজানা আশঙ্কা মনের মধ্যে দানা বাঁধছিল। মা-বাবা দুজনেই আমাকে সাহস দিচ্ছিলেন। সব আশঙ্কাকে ঝেড়ে ফেলে পড়ায় মনোযোগ দেই। আমি পড়ছি সেলিনা হোসেনের ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’। ১১টার দিকে বইটা শেষ করে উঠি। অসাধরণ একটি উপন্যাস। ইতোমধ্যে বন্ধুদের ফোন আসতে শুরু করেছে। সবাই স্কুলে ডাকছে। গোসল শেষ করে স্কুলের দিকে যাত্রা করি। মা মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করলেন। বাবা অফিস থেকে ফোন করে সাহস দিলেন। যা কিছুই হোউক সবকিছুকে সহজভাবে নেওয়ার মন্ত্র দিলেন। আমি বারোটার দিকে পৌঁছে গেলাম স্কুলে। BkivZ, Zvnvwe Rvgvb, bvwd, mvwenv myjZvbv kÖveYx, D‡¤g iZœbv শ্রাeYx, রেজোয়ানা সাবরিন, সিনথিয়া জাহান মেধা, আয়শা আক্তার অনন্যা, অরচি,
সৌদিয়া, জয়া, জন্নাতি, জান্নাতুল মাওয়া, রিতু, সিতু, নিশাত তাবাস্সুম, নিশাত সাদিয়া, রুবাইয়া , ফারজানাসহ অনেক বন্ধুরাই কলেজে মাঠে উপস্থিত। অনেকেরই বাবা-মা এসেছেন। অথচ আমি একা । জীবনের এই পর্যায় থেকেই তো আসল লড়াই শুরু। বাবা বলেন, জীবনের বড় বড় লড়াই একাই লড়তে হয়। এই ভেবে মনটাকে স্থির-শান্ত-হাসিখুসি রাখলাম। নোটিশ বোর্ডের দিকে অনেকেই ছুটে যাচ্ছে। কেউ কেউ মোবাইলে চেষ্টা করছে রেজাল্ট নেয়ার। আমিও চেষ্টা করছি। কিন্তু মেসেজ যাচ্ছে না। অগত্যা নোটিশ বোর্ডের দিকে এগিয়ে গেলাম। নামিসা চিৎকার করে বললো, এ্যাই মারিতা- তুই জিপিএ-৫ পেয়েছিস। এ সময় আমার মোবাইলটাও বেজে উঠলো। বাবা অভিনন্দন জানালেন। আশ্বস্ত হয়ে ধন্যবাদ জানালাম বাবাকে। তারপর প্রধান শিক্ষক স্যারের কক্ষে গিয়ে স্যারসহ সবাইকে সালাম করলাম। দোয়া করলেন সবাই। হেডস্যার সবাইকে মাঠে যেতে বললেন। ছবি তুলবেন। স্যার খুব খুশি। এ+ প্রাপ্তির দিক থেকে বোর্ডে আমাদের স্কুল প্রথম হয়েছে। আমাদের জন্য ডাবল আনন্দ। হেডস্যার একটা সংক্ষিপ্ত বক্তৃতাও দিলেন। আমাদের উদ্দেশ্যে বললেন, মনে রাখবে সাফল্য শুধু আনন্দ দেয় না, দায়িত্বও দেয়। তোমাদের এখন দায়িত্ব হলো- এইচ এস সিতেও ভালো রেজাল্ট করার এবং ভবিষ্যতে ভালো মানুষ হয়ে দেশ ও দেশের মানুষের সেবা করার। অনেকক্ষণ হৈচৈ করে ছুটলাম বাড়ির দিকে। খুশিতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম বাবার বুকে। মা এসে জড়িয়ে ধরে চুমুতে ভরিয়ে দিলেন। আত্মীয়-স্বজন অনেকেই ফোন করে অভিনন্দন জানালেন। অসাধারণ একটা আনন্দ অনুভূতিতে শরীরটা শিহরিত হতে থাকল। এখন রাত প্রায় ১১টা বাজে। চোখের পাতা ভারি হয়ে যাচ্ছে। সুন্দর প্রত্যশা আর সাফল্যের অনুরণন নিয়ে ঘুমাতে যাচ্ছি।
প্রশ্ন ৫: তোমার কলেজের বিশিষ্ট কোনো দিনের উল্লেখপূর্বক দিনলিপি লেখ।
অথবা, কলেজের প্রথম দিনের বর্ণনা দিয়ে একজন শিক্ষার্থীর দিনলিপি লেখ।
উত্তর: নিচে বিশিষ্ট দিনের অর্থাৎ কলেজের প্রথম দিনের উল্লেখপূর্বক দিনলিপি উপস্থাপন করা হলো:
২রা মার্চ, বুধবার, ২০২৩: সময়: রাত ১১.৩০ মি.
আজ ভোর সাড়ে চারটায় ঘুম থেকে উঠি। প্রাতঃকৃত্য সম্পন্ন করে নামাজ/প্রার্থনা সম্পন্ন করি। অতঃপর হালকা ব্যায়াম করে পড়তে বসি। যদিও পাঠ্য বইয়ের নির্ধারিত কিছু পড়ার ছিল না। কয়েক দিন যাবৎ সেলিনা হোসেনের ‘গায়ত্রী সন্ধ্যা’ পড়ছি। তিন খণ্ডের বিশাল বড় বই কিন্তু পড়তে বেশ লাগছে। আমার বন্ধুদের সবাইকে বইটি পড়তে বলবো।
আজ দিনের শুরুতেই মনটা বেশ ফুরফুরে। কারণ, আজ জীবনে প্রথম কলেজে যাবো। অর্থাৎ আজ আমার কলেজ জীবনের প্রথম দিন। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল বিখ্যাত কোনো কলেজে পড়াশোনা করব। আজ আমার স্বপ্ন সফল হলো। ছোটবেলায় আমার বড় ভাইয়ের রচনা বইয়ে পড়েছিলাম ‘কলেজের প্রথম দিন’। আজ আমার জীবনের সেই দিন, আমি খুবই আনন্দিত।
আড়াই ঘণ্টার মতো পড়ে, নাস্তা করি এবং কলেজে যাই। আজ আমার জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। আমার বহুদিনের স্বপ্ন ছিল আমি একটি নামকরা কলেজে পড়বো। সেই স্বপ্নের দিনটি আজ ধরা দিয়েছে। ক্লাসরুমে ঢুকে দেখি আমার স্কুলের এবং পরিচিত অনেক বন্ধুরাই এই কলেজে ভর্তি হয়েছে। মারজানা, রেহেনা, মুকিদ, শানু, বুশরা, দিগন্ত, তুলি, সুমন আহমেদ, বাদশা ইসলাম, তানভির খান, মুন, তিতলি, পৃথা, সাবা, মুনতাহা, সিনথিয়া, বর্ণা, দৃষ্টিসহ আরো অনেককে দেখে বেশ আনন্দ লাগল। কলেজের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এই দিনটিতে নবীনদের আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নিবেন। আমি কলেজে উপস্থিত হওয়ার পর সকাল ১১টায় শুরু হলো অনুষ্ঠান। নবীনদের একটি লাল গোলাপ, একটি রজনিগন্ধা ফুলের স্টিক, একটি মানপত্র ও একটি ক্লাস রুটিনের কপি দিয়ে বরণ করা হলো। ক্লাস রুটিনের অপর পৃষ্ঠায় মুদ্রিত আছে কলেজের গত একশ বছরের অর্জন। সদ্য আমার হওয়া কলেজের অর্জন দেখে বুকটা গর্বে ফুলে উঠে।
অনুষ্ঠানের প্রধান-অতিথি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র- বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। তিনি এক সময়ে এই কলেজের সেরা ছাত্র ছিলেন। প্রথমে কোরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। তারপর নবীনদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন দ্বাদশ ও অনার্স শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা। নবীনদের পক্ষ থেকেও একজন বক্তব্য রাখলেন। সম্মানিত প্রধান অতিথি আমাদের ভাল ফলাফলের জন্য অভিনন্দন জানালেন। লেখা পড়ার পাশাপাশি দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের দায়িত্বের কথা বললেন। সুন্দর, শান্তিময় এবং সমৃদ্ধ বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আমাদের মেধাকে কাজে লাগাতে পরমর্শ দিলেন। অতঃপর আমাদের উদ্দেশ্যে আরও মূল্যবান বক্তব্য রাখলেন অধ্যক্ষ মহোদয়। তিনি তাঁর বক্তব্যে এই ঐতিহ্যবাহী কলেজের সুনাম ধরে রাখার জন্য আমাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। আলোচনা পর্ব শেষ হওয়ার পর শুরু হয় সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শেষে অসীম আনন্দ আর বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। কলেজ জীবনের এই দিনটি আমার কাছে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই দিনটির কথা আমি কোনো দিনই ভুলবো না।
প্রশ্ন ৬: তোমার কলেজে বাংলা নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠান হয়েছে তার বিবরণ দিয়ে একটি দিনলিপি লেখ।
অথবা, বাংলা নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠানমালার বিবরণ দিয়ে একটি দিনলিপি লেখ।
অথবা, বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন বিষয়ে একটি দিনলিপি লেখ। (সিবো-২০১৬)
১৪ এপ্রিল, রবিবার, ২০২৪: সময়: রাত ১১.৩০ মি.
প্রতিদিনের মতো আজও ভোর ৫.০০টায় ঘুম থেকে উঠি। নামাজ পড়ে হালকা ব্যায়াম করি। আজ আর পড়তে বসার তাড়া ছিল না। মনে ছিল এক আনন্দের গুঞ্জরণ। আজ বাংলা বছরের প্রথম দিন। আজ ১লা বৈশাখ। আজ বাংলার উৎসব, বাঙালির উৎসব, বাঙালির প্রাণের উৎসব- ‘বাংলা নববর্ষ’। ব্যায়াম করার সময়ই মনের কানে যেন বাজছিল ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’। ব্যায়াম শেষ না হতেই আমার বন্ধু ইবনাতের ফোন এলো। বলল, তাড়াতাড়ি কলেজ মাঠে আয়। আমি দ্রুত কলেজ মাঠে উপস্থিত হই। কলেজের পক্ষ থেকে কলেজ মাঠে বর্ষবরণের ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠান আয়োজন করার কিছু দায়িত্ব আমার উপরও ছিল। গত রাত ১১টা পর্যন্ত কাজ করেও অনুষ্ঠান আয়োজনের কাজ শেষ করা যায় নি। দ্রুত হাত লাগিয়ে কাজ শেষ করি। ইতোমধ্যে অনেকেই এসে উপস্থিত হয়। কলেজের অধ্যক্ষ স্যারসহ অন্য শিক্ষকগণও এসে উপস্থিত হয়েছেন। আমার বন্ধরাও অনেকেই উপস্থিত হয়েছে। মালিহা, তাসিন, শেফা, ইবনাত, ফারিহা, সুষ্মিতা, সূচনা, লুবা, ফারজানা, ত্রয়ী, বাণী রেফায়েত, রাহুল রায়, সৌমিত্র বণিক, পূর্ণ, পৃথি, মুনতাসির, রাকিব, মিরাজ, নৌশিন, রিদান, সৈয়কতসহ অনেককেই দেখে আমার বেশ আনন্দ লাগে। মেয়েরা সাদা শাড়ি পড়েছে এবং ছেলেরা পড়েছে সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি। শ্বেত-শুভ্রতায় সমস্ত কলেজ মাঠ মনোরম হয়ে উঠেছে। একটু পরেই মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয় অধ্যক্ষ ড. জালাল উদ্দিন আকবর স্যারের নেতৃত্বে। কারো হাত খালি নেই। কারো হাতে বেলুন, কারো হাতে ফেস্টুন, কারো হাতে বাঁশি। শব্দ আর রঙে সমস্ত এলাকায় এক মায়াময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এই স্মৃতি অনেক দিন মনের মধ্যে স্থায়ী হয়ে থাকবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ করে কলেজ মাঠে আবার ফিরে আসে। শুরু হয় তেলাপিয়া মাছের ভাজি আর শুটকি ভর্তা দিয়ে পান্তা খাওয়ার ধুম। এ বছর আমাদের খাদ্য তালিকায় ইলিশ ছিল না। এপ্রিল-মে মাস ইলিশের প্রজনন সময় বলে আমাদের অধ্যক্ষ স্যার সবাইকে ইলিশ খেতে নিরুৎসাহিত করেন। এর পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শেষ করে দুপুরে খাওয়ার জন্য বাসায় ফিরি। ৩টার দিকে আবার কলেজ মাঠে যাই। শুরু হয়েছে বৈশাখি মেলা। মেলায় ঘুরে ঘুরে কুটির শিল্পের বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনি। এই সমস্ত জিনিস খুবই সাধারণ কিন্তু এগুলোর নান্দনিক সৌন্দর্য বর্ণনা করা আমার অসাধ্য। অতঃপর দেশীয় বিভিন্ন খাবার দিয়েই উদরপূর্তি করি। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে ৯টায় বাসায় ফিরি। রাতের খাবার শেষ করতে না করতেই চোখে ঘুমের আমেজ চলে আসে। চোখ বলছে এখনই ঘুমাতে যাওয়া উচিৎ। তবে আজকের এই দিনটির কথা মনে থাকবে চিরকাল।
প্রশ্ন ৭: কোনো ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের দিনলিপি লেখ।
উত্তর : নিচে বাংলাদেশের বিশিষ্ট ঐতিহাসিক স্থান লালবাগ কেল্লা ভ্রমণের দিনলিপি উপস্থাপন করা হলো:
২০শে জানুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার, সময়: রাত ১১.৩০ মি.
একটি অসাধারণ আনন্দময় এবং শিক্ষণীয় দিনের সমাপ্তি হয় আজ। মনে একটি আনন্দ ও কৌতূহলের আমেজ নিয়ে ঘুম ভাঙে ভোর ৫টায়। ঘুম ভাঙতেই মনে হয় আজ আমরা কলেজে থেকে লালবাগ কেল্লা ভ্রমণ করতে যাব। এই ভ্রমণের আয়োজন করেছে আমাদের কলেজের ইতিহাস বিভাগ। এই ভ্রমণের আমার সঙ্গী হয় আমার অনেক বন্ধুরা। যাদের সাথে এই আনন্দময় ভ্রমণ করেছি তাদের কয়েকজনের নাম এখানে না বললেই নয়। নদী, প্রিয়ন্তী, জান্নাত, সৌরভ, ফাহিম, সিফাত, রিয়ানা, তিথি, মনিরা, বৃষ্টি, মৌমিতা, নামিসা, বিভোর, মারিতা, তাসনিম, সুমাইয়া, মৃদুলা প্রমুখের সঙ্গ আমার ভ্রমণকে আনন্দময় করেছে ব্যাপকভাবে। ভ্রমণসূচি অনুযায়ী যথারীতি আমরা দুপুর ১২টায় লালবাগ কেল্লায় পৌঁছাই।
,
সু-উচ্চ প্রাচীরঘেরা বর্গাকৃতির লালবাগ কেল্লার প্রথমেই নজরে আসে বিশাল তোরণ বা ফটক। এতে মোট তিনটি ফটক আছে; যার দুটি বর্তমানে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভিতরে প্রবেশ করলেই পাওয়া যায় একটি বাগান। বাগান ঘেরা পরিবেশ দর্শনার্থীদের মনে আনন্দের অনুভূতি জাগায়। সোজা একটু ভিতরে গেলেই সামনে পড়ে শায়েস্তা খানের প্রিয় কন্যা পরীবিবির সমাধিসৌধ। ১৬৮০-৮৮ খ্রিস্টাব্দের কোনো এক সময় পরীবিবি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য শায়েস্তা খান ব্যয়বহুল এ সমাধিসৌধ নির্মাণ করেন। একটি পুকুর রয়েছে কেল্লার পূর্ব প্রান্তে। পেছনে রয়েছে সৈনিকদের ব্যারাক; যা বর্তমানে আনসার ক্যাম্প।
কেল্লার ভিতরে রয়েছে একটি মসজিদ। এটি সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র শাহজাদা আযম বাংলার সুবেদার থাকার সময় নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদটি আয়তাকারে নির্মিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট। এ মসজিদটি এদেশের প্রচলিত মুঘল সমজিদের একটি আদর্শ নিদর্শন।
ভিতরে রয়েছে শায়েস্তা খানের বাসভবন। বাসভাবনের পাশে একটি কামান। এই কামানটি সেই সময়ে বিভিন্ন যুদ্ধে ব্যবহৃত হতো। লালবাগ কেল্লায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় যে জিনিসটি আছে তা হলো সুবেদার শায়েস্তা খানের বাসভবন ও দরবার হল। ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের এ এক অনন্য নিদর্শন।
এছাড়াও এ স্থানে রয়েছে সিংহাসনে বসা সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রতিকৃতি, আসফ শাহ বাহাদুরের প্রতিকৃতি, মধুমতি অঙ্কিত একটি চিত্র, উটের নাচ, বন্যজন্তু, যুবরাজ ও রাজ তনয়ার অশ্ব চালনা, বৃক্ষ ছায়ায় চিন্তামগ্ন খাজা হাফিজ সিরাজ, অমাত্যদের আঘাতে রক্তাক্ত দুটি মানুষকে অবলোকনের চিত্র।
বস্তুত, ঐতিহাসিক এই স্থান ভ্রমণ করে আমাদের অতীত ঐতিহ্য সম্বন্ধে যে অভিজ্ঞতা লাভ করলাম তা চিরদিন স্মৃতির ভাণ্ডারে অক্ষয় হয়ে থাকবে।
ঐতিহাসিক এই স্থান ভ্রমণ করে আমরা যখন কলেজে পৌঁছাই তখন রাত ৮টা। এই ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের কিছু দায়িত্ব আমার উপরও ছিল। দায়িত্ব শেষ করে যখন বাসায় ফিরি তখন ঘড়িতে ১০টা বাজে। রাতের আহার শেষ করতে করতেই ক্লান্ত দেহ ঘুমের রাজ্যে প্রবেশের জন্য ব্যাকুল। এখন রাত ১০টা বেজে ৩০ মিনিট। এখনই নিজেকে বিছানায় সমর্পণ করবো।
প্রশ্ন ৮ : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তোমার অনুভূতি ব্যক্ত করে একটি দিনলিপি লেখ। (কুবো-২৩)
অথবা, তোমার কলেজে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের একটি দিনলিপি লেখ। (সিবো-২৩)
তারিখ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সময়: রাত ১১.৩০ মি.
উত্তর : নিচে একুশে ফেব্রুয়ারি তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের অনুভূতি ব্যক্ত করে একটি দিনলিপি উপস্থাপন করা হলো:
ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে একুশে ফেব্রুয়ারি তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করতে প্রভাতফেরিতে যাই এবং শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করি। তাই বিষয়টি আমার কাছে খুব নতুন নয়। কিন্তু এবারের একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরিতে শহিদ মিনারে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার কাছে একেবারে অন্য রকম। কারণ এইবারই আমি যাচ্ছি বাবাকে ছাড়া। আমরা কলেজে একটি সাংস্কৃতিক ও সেবামূলক সংগঠন করেছি, যার নাম ‘আমার স্বপ্ন, আমার দেশ’। এই সংগঠনের সভাপতি আমি। আমার যে বন্ধুরা এর সদস্য তারা হলো- সেলিম, সুমন, মোজাহিদুল, সোহাগ, অরথি, এশা, সিনহা, কাফি, দীপ্ত, চিন্ময়, উদয়, মৃত্তিকা, মাহফুজ, ওয়াহেদুল, সাদিয়া, সাবিনা, মাসুদা, নূপুর, নীপা, রাকিবুল, রোহান,মাজিদ প্রমুখ। এই সংগঠন থেকেই আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করছি এবার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে : প্রভাতফেরি ও শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
ভোর ৬টার দিকে সংগঠনের প্রায় ৫০ জন সদস্য একত্রিত হই কলেজ প্রাঙ্গণে এবং সূর্য উঠার পূর্বেই শহিদ মিনারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। আমাদের সবার কণ্ঠেই গান : ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি।’ রাস্তার দুদিকের যে দিকের দেয়ালেই চোখ পড়ে সেখানেই বাংলা ভাষার বিভিন্ন বাণী লেখা রয়েছে এবং আঁকা রয়েছে বিভিন্ন আলপনা। এ এক অন্য রকম আবহ। রাস্তায় অগণিত মানুষ। সবার আচরণে, চোখে-মুখে দেশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ছাপ। মাইকে বাজছে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি।’ মিনার প্রাঙ্গণে আঁকা রয়েছে লাল ও সাদা রঙের বিশাল আলপনা, যা একই সাথে শান্তি ও সংগ্রামের বাণী প্রচার করছে। শহিদ মিনারের সোপানের নিচের ধাপগুলোতেই ফুল রাখা হচ্ছে। আমাদের সংগঠনের ছেলে-মেয়েরা সারিবদ্ধ হয়ে ধীরে ধীরে শহিদ মিনারের মূল বেদির দিকে এগুচ্ছে। কোনো প্রকার ঠেলাঠেলি বা বিশৃঙ্খলা নেই। সমস্ত আয়োজনের শৃঙ্খলার দায়িত্বে আছে পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। আমরা শহিদ মিনারের মূল বেদিতে উঠলাম এবং পুষ্প স্তবক অপর্ণ করে বেরিয়ে এলাম। মাইকে বাজছে ফেব্রুয়ারির গান, ভাষার গান, দেশাত্মবোধক গান। ধারাবর্ণনার ফাঁকে ফাঁকে উপস্থাপক একুশে ফেব্রুয়ারির মাহাত্ম্যকে তুলে ধরছেন। তাতে একুশের ভাবগাম্ভীর্য সঞ্চারিত হচ্ছে সবার মনে প্রাণে। দেশি-বিদেশি বাংলা ভাষার অনুরাগী মানুষের স্রোত আসছে-যাচ্ছে।
বিকালে শুরু হয় আলোচনা সভা ও সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শেষ করে বাড়িতে ফিরি রাত ৯টায়। একটু আগেই রাতের আহার শেষ করলাম। এখনই নিজেকে বিছানায় সমর্পণ করবো।
প্রশ্ন ৯: একাদশ শ্রেণিতে নতুন ভর্তি হয়েছে, এমন একজন শিক্ষার্থীর দিনলিপি লেখ।
উত্তর: নিচে একজন সাধারণ ছাত্রের দিনলিপি উপস্থাপন করা হলো:
২রা মার্চ, বুধবার, ২০২৩: সময়: রাত ১১.৩০ মি.
ভোর ৫.০০ টায় ঘুম থেকে উঠি। একটু হালকা ব্যায়াম করি। অতঃপর পড়তে বসি। সকাল ৮.৩০ মিনিটে নাস্তা সারি। আজ কলেজ জীবনের প্রথম ক্লাস। ড্রেস পরে ৮.০০ টায় কলেজের উদ্দেশ্য যাত্রা করি। ৮.৩০ মিনিটে কলেজে পৌঁছি। ৯.০০ টায় আমাদের ক্লাস কলেজ ভবনের দো তলায় ২০৫ নং কক্ষে। ক্লাসে আমার পুরানো দুজন-বন্ধুর সাথে কথা হয়। লিজা, নাবিহা, মৃদুলা, ইবনাত, ইশরাত, তৌহিদ, পরশ, আশরিফা, রাকা, জারিন তাসনিম, সুমাইয়া, মেধাসহ অনেকের কথাই এই মুহূর্তে বিশেষভাবে মনে পড়ছে। নতুন সহপাঠীদের সাথেও পরিচয় হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জান্নাতুল ফেরদৌসী, প্রান্তি রায়, জয়শ্রী রায়, নম্রতা, নুশরাত, সুপর্ণা, গালিব, সিয়াম, সুমাইয়া, তারিন, সাদিয়া, নিশাত, নাবিলা, তিনা,প্রমুখ। ৯.০০ টায় ক্লাস শুরু হয়। প্রথমেই বাংলা ক্লাস। ক্লাস নিতে আসেন শামিমা ম্যাডাম।
ম্যাডাম তাঁর নিজের পরিচয় দিলেন। আমাদের নাম, রেজাল্ট ও কে কোন স্কুল থেকে এসেছে তার তথ্য নিলেন। বাংলা বিষয় যে মজার বিষয় সে সম্পর্কে একটি সুন্দর ধারণা দিলেন। প্রথম ক্লাশেই ম্যাডামের জ্ঞানগর্ব বাণীভঙ্গিতে ম্যাডামকে আমার ভাল লেগে গেলো। এরপর ইংরেজি বিষয়ে ক্লাস নিতে এলেন কৌশিক স্যার। ইংরেজি যে এত সহজ করে বুঝানো যায় তা স্যারের ক্লাশে অনুধাবন করলাম। এরপর আরও চারজন স্যারের ক্লাশ করলাম। মনে হলো প্রত্যেক স্যারই তাদের স্ব-স্ব বিষয়ে পণ্ডিত। স্যারদের ব্যাবহারও চমৎকার, বন্ধুসুলভ। তিনটায় কলেজ ছুটি হলে বাসায় ফিরি। হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসি। পরে একটু বিশ্রাম করি। বিকেল পাঁচটায় খেলার মাঠে যাই। সন্ধ্যায় পড়তে বসি। রাত ১০ টায় রাতে খাবার শেষ করি। এখন প্রায় মধ্য রাত। নিজেকে বিছানায় সমর্পণ করবো।
প্রশ্ন ১০: একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর দিনলিপি লেখ।
উত্তর: নিচে একজন সাধারণ ছাত্রের দিনলিপি উপস্থাপন করা হলো:
৮ই জানুয়ারি, রবিবার, ২০২৪: সময়: রাত ১১.৩০ মি.
আজ ভোর সাড়ে চারটায় ঘুম থেকে উঠি। প্রাতঃকৃত্য সমাপ্ত করে নামাজ/প্রার্থনা সম্পন্ন করি। অতঃপর হালকা ব্যায়াম করে পড়তে বসি। আড়াই ঘণ্টার মতো পড়ে, নাস্তা করি এবং কলেজে যাই। কলেজের রুটিনে আজ প্রথমেই বাংলা ক্লাস ছিল। ক্লাসে গিয়ে দেখি আমার অনেক বন্ধুরাই উপস্থিত। এই মহূর্তে যাদের নাম মনে পড়ছে তারা হলো- সূচি, মৃত্তিকা, হৃদি, আরিফ হাসান, রিশা, সুরভি, মুমু, শায়লা, জেনিথ, আবদুল কাদের, তাইয়েবা, মেধা, আনিকা, ঋদ্ধি, নৌশিন, সামিরা, রিপ্তি, সিফাত, সুজন, জারিফ, নাবিল, রিম, সাবা, মাধুর্য, অঙ্কিতা, নিটোল, মৌলি, মোহনা, প্রান্তি, রাইয়ান, মুয়িন, রাকিবুজ্জামান, অরন্য, শোভন প্রমুখ। বাংলা ক্লাস নিতে আসেন আমাদের সবার প্রিয় মুশফিক স্যার। স্যার আজ পড়ালেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনার তরী’ কবিতা। বাচনভঙ্গি আর বিষয় উপস্থাপনের ঢঙ দিয়ে স্যার আগেও আমাদের মুগ্ধ করেছেন, আজও করলেন। ‘ সোনার তরী’ কবিতা নিজে নিজে পড়ে অনেকবার বুঝতে চেষ্টা করেছি কিন্তু সেভাবে পারিনি। আজ স্যার যেভাবে পড়ালেন, তাতে ‘সোনার তরী’ কবিতার মর্মবস্তু আমার কাছে তো স্পষ্ট হলোই- কবি রবীন্দ্রনাথ আমার কাছে দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ হয়ে ধরা দিলেন। স্যারকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরপর একে একে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিদ্যা ও আইসিটির ক্লাস করি। সবগুলো ক্লাসই আজ ভালো লাগে। পরিতৃপ্ত মন নিয়ে দুপুর ২টায় বাসায় ফিরি। খাওয়া-দাওয়া সেরে বিছানায় গাটা ছেড়ে দিতেই ঘুমের সাগরে তলিয়ে যাই। ঘণ্টাখানেক পরেই ঘুম ভাঙে। হাত-মুখে পানি দিয়ে আবার পড়তে বসি। বিকালে রোদের তেজ কমে এলে মাঠে খেলতে যাই এবং সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসি। সন্ধ্যার পর আবার পড়তে বসি। একটানা পড়াশোনা করি রাত দশটা পর্যন্ত। টিভিতে খবর দেখতে দেখতে রাতের খাবার শেষ করি। কিছু নেতিবাচক সংবাদ আমাকে পিড়ীত করে। প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় আর সন্ত্রাসী কার্যক্রমে মানুষ মরছে। আজও দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জন মানুষ নিহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেল। এটা যেন আমাদের নিয়তি। এখন রাত ১১টা। বিছানা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। অসীম নিদ্রায় নিজেকে সমর্পণ করবো।
+88 01713 211 910