
বাংলা নাসিক্য, তাড়নজাত, পার্শ্বিক ও উষ্ম/শিস ধ্বনির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
প্রসঙ্গ- বাংলা নাসিক্য, তাড়নজাত, পার্শ্বিক ও উষ্ম/শিস ধ্বনির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ নিচে নাসিক্য, তাড়নজাত,পার্শ্বিক ও উষ্ম/শিস ধ্বনির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করা হল:
নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি: বাংলা নাসিক্য ধ্বনি স্পৃষ্ট ধ্বনের ন্যায় বায়ুপথ সম্পূর্ণ রুদ্ধ অবস্থায় গঠিত হয়। তবে স্পৃষ্ট ধ্বনির সঙ্গে নাসিক্য ধ্বনির পার্থক্য আছে। নাসিক্য ধ্বনি গঠনে বায়ুপথ রুদ্ধ হলেও পিছনের তালুর পথ খোলা থাকে। তবে বাতাস অবরুদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও মুখ দিয়ে বের হতে না পেরে উচ্চারণের স্থানে জমা হয় না। বরং নাসিক্য গহ্বর দিয়ে বের হয়ে যায়। আর এই অবস্থায় যে ধ্বনি উচ্চারিত হয়, তাই নাসিক্য ধ্বনি। বাংলায় তিনটি নাসিক্য ব্যঞ্জন ধ্বনি রয়েছে। যথা:

উল্লিখিত নাসিক্য ধ্বনিসমূহ গঠনের সময় মৌখিক অনুনাদের পার্থক্যের জন্য ভিন্নতর শ্রুতিগত বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। তাছাড়া বাক প্রত্যঙ্গেও বিভিন্ন প্রকার আলোড়ন দেখা যায়। /ম/,ধ্বনি উচ্চারণের সময় ঠোঁট দুটো বন্ধ থাকে। এ ধ্বনি উচ্চারণে জিভের অবস্থায় তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। /ন/, উচ্চারণের সময় মৌখিক অবরোধ লক্ষণীয় । এ ধ্বনি উচ্চারণে নরম তালুর নিচে নেমে আসে। /ঙ/, ধ্বনি উচ্চারণের সময়ও নরম তালু নিচে নেমে আসে।
তাড়নজাত ধ্বনি (Flap): জিভের ডগার উল্টো দিক ও দাঁতের গোড়ার সামান্য স্পর্শে এ ধ্বনির সৃষ্টি হয়। এ ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভের ডগা ও তালু মিলে তাড়না বা কম্পনের সৃষ্টি করে। বাংলায় দু’টি তাড়জাত ধ্বনি রয়েছে। যথা:

/ড়/ উচ্চারণের সময়, /র/- এর সমান বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা গেলেও উভয়ের মধ্যে স্বাতন্ত্র্য বিদ্যমান। /ড়/ উচ্চারণের সময় জিভের ডগা পূর্ব তালুর অংশ স্পর্শ করে।
পার্শ্বিক ব্যঞ্জন ধ্বনি (Lateral): পার্শ্বিক ধ্বনি গঠনের সময় মুখ বিবরের মধ্যখানের বাতাস সস্পূর্ণ রুদ্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু পরক্ষণেই জিভের উভয় পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। আর এই প্রক্রিয়ায় যে যে ধ্বনি উচ্চারিত হয় তাকে পার্শ্বিক ধ্বনি বলে। অন্য কথায় ফুসফুস তাড়িত বাতস জিভের দু’পাশ দিয়ে নির্গত হয়ে যে ধ্বনি সৃষ্টি করে তাকে পার্শ্বিক ধ্বনি বলে। বাংলায় পার্শ্বিক ধ্বনির সংখ্যা মাত্র এক। যথাঃ-/1//ল/।
উষ্ম বা শিস ধ্বনি (Spirant, Fricative): ফুসফুস থেকে বাতাস বেরিয়ে যাবার সময় মুখ বিবরে ঘষা লেগে, চাপ খেয়ে বা সংকীর্ণভাবে উষ্ম বা শিষ ধ্বনি সৃষ্টি হয়। এ ধ্বনি উচ্চারণে ওষ্ঠ ও জিহ্বা ঈষৎ প্রসৃত হলে প্রশস্ত Slit এবং জিহ্বা কুঞ্চিত হলে সংকীর্ণ (groove) উষ্মধ্বনি বলে।
স্পৃষ্ট ধ্বনি উচ্চারণে শ্বাস পথ সষ্পুর্ণরূপে এবং উষ্মধ্বনি উচ্চারণের শ্বাস বায়ু আংশিক রূপে বাধাপ্রাপ্ত হয়। বাংলায় শিস ধ্বনি তিনটি যথা: / S //স/./ š//শ,ষ/,/ h //হ/
উচ্চারণ স্থান ও উচ্চারণ রীতি অনুযায়ী বাংলা নাসিক্য, তাড়নজাত, পার্শ্বিক ও উষ্ম/শিস ধ্বনি তালিকা নিচে দেওয়া হল-

সুতরাং উচ্চারণ স্থান ও রীতি অনুযায়ী বাংলা নাসিক্য, তাড়নজাত, পার্শ্বিক ও উষ্ম/শিষ ধ্বনিকে বিশ্লেষণ করে নিম্নরূপ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।
/m//ম/- এটি একই সাথে স্বল্পপ্রাণ, ওষ্ঠ্য ও নাসিক্য ধ্বনি।
/n//ন বা ণ/- এটি একই সাথে স্বল্পপ্রাণ, দন্ত্য ও নাসিক্য ধ্বনি।
/h//ঙ বা ং/- এটি একই সাথে স্বল্পপ্রাণ, কন্ঠ্য ও নাসিক্য ধ্বনি।
/r/ /র/- এটি একই সাথে স্বল্পপ্রাণ, দন্ত্য ও তাড়নজাত ধ্বনি।
/r/ /ড়/- এটি একই সাথে স্বল্পপ্রাণ, মূর্ধন্য ও তাড়নজাত ধ্বনি।
/r/ /ঢ়/- এটি একই সাথে মহাপ্রাণ, মুর্ধন্য ও তাড়নজাত ধ্বনি।
/l/ /ল/-এটি একই সাথে ঘোষ, স্বল্পপ্রাণ, দন্ত্য ও পার্শ্বিক ধ্বনি।
/s/ /স/- এটি একই সাথে অঘোষ, স্বল্পপ্রাণ দন্ত্য ও ।উষ্ম ধ্বনি।
/ š/ /শ/ষ/-এটি একই সাথে স্বল্পপ্রাণ-তালব্য ও উষ্ম ধ্বনি।
/h//হ/-এটি একই সাথে স্বল্পপ্রাণ, কন্ট্য ও উষ্ম ধ্বনি।
+88 01713 211 910